কৃপণতা : সফলতা আর সমৃদ্ধির জন্য এ বাধা দূর করতেই হবে-২

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম

সূরা বাকারার ২৫৪ নং আয়াত, যা আমরা গত আলোচনায় উদ্ধৃত করে এসেছি, তাতে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়েছেন আমাদেরকে এই বলে- দুনিয়াতে তোমাদেরকে যে সম্পদ দেয়া হয়েছে তার ব্যবহার এবং তা থেকে উপকৃত হতে চাইলে তা ব্যয় করতে হবে দুনিয়াতেই। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে এ সম্পদ ব্যয় করার কোনো সুযোগ থাকবে না। সেখানে ক্রয়-বিক্রয় বলতে কিছু থাকবে না। আবার দুনিয়ার এ জীবনে একজনের হাতে সম্পদ দেখে আরো দশজন তার বন্ধু বনে যায়। ন্যায়-অন্যায়ের পরোয়া না করে তার পক্ষে তারা দাঁড়িয়ে যায়।

সম্পদকে কেন্দ্র করে এই যে বন্ধুত্ব, তাও এ দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ। দুনিয়াতে আল্লাহর দান এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে যদি তাঁর সন্তুষ্টি হাসিল করা না যায়, পরকালে তাহলে এ সম্পদের ফল ভোগ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, সম্পদ ব্যয় করতে হবে। কী দুনিয়াবি ব্যক্তিগত প্রয়োজন আর কী ইবাদত; কার্পণ্যকে আশ্রয় দেয়া যাবে না কোথাও। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মুমিনের সম্পদ ব্যয়ও কীভাবে তার জন্যে পুণ্য বয়ে আনে, লক্ষ্য করুন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : সন্দেহ নেই, আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় তুমি যা কিছুই ব্যয় কর, তাতে তুমি পুরস্কৃত হবেই, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুমি তুলে দাও তাতেও (রয়েছে তোমার জন্যে পুরস্কার)। (সহীহ বুখারী : ১২৯৫)।

এই হচ্ছে মুমিনের সম্পদ ব্যয়ের ফল। নিজের ক্ষুধা মেটানোর জন্যেও যখন সে কিছু খাবে, তার লক্ষ্য তখন থাকে শারীরিক শক্ত অর্জন, যা কাজে লাগিয়ে সে আল্লাহপাকের ইবাদত করতে পারবে। স্ত্রী-সন্তানাদির জন্যে যখন সে কোনোকিছু কিনে নিয়ে আসে, তার লক্ষ্য থাকে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন এবং তা দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। এমনকি নতুন কাপড়চোপড় যখন সে কিনতে যায় তখনো তার মাথায় থাকে আল্লাহ তাআলার দেয়া নিআমতের প্রকাশ ও কৃতজ্ঞতার কথা।

আর এ সম্পদ ব্যয় যদি হয় ফরয ইবাদত যাকাত আদায়ের জন্য, ওয়াজিব কুরবানী কিংবা সদাকাতুল ফিত্র আদায়ের জন্যে, এ সম্পদ ব্যয় যদি হয় আল্লাহ তাআলার অভাবী দুঃখী বান্দাদের অভাব ও দুঃখ ঘুচাবার জন্যে, আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্যে, যদি তা ব্যয় হয় তাঁর সৃষ্টির সেবায় রাস্তার ধারে নলকূপ স্থাপনে কিংবা পথিকদের জন্যে কোনো বিশ্রামাগার নির্মাণে, তাহলে তো এর পুরস্কারের কথা বলাই বাহুল্য। শর্ত একটাই- নিয়তটাকে খালেস করে নিতে হবে।

কিন্তু স্বভাবজাত কার্পণ্যকে যদি জয় করা না যায়, কার্পণ্য যদি ইবাদত পালনে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব আদায়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তার অশুভ পরিণতির কথাও বর্ণিত হয়েছে এ পাক কুরআনেই। কোথাও বলা হয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির কথা, কোথাও বলা হয়েছে সম্পদকে বেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়ার কথা, কোথাওবা সেই সম্পদকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছেকা দেয়ার কথা।
ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা দিয়েছেন, যারা তা নিয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে- এটা তাদের জন্যে কল্যাণকর; বরং তা তাদের জন্যে অকল্যাণকর। তারা যা নিয়ে কৃপণতা করেছে অচিরেই তা তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেয়া হবে। আর আকাশসমূহ ও পৃথিবীর উত্তরাধিকার তো আল্লাহর। আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত। (সূরা আলে ইমরান : ১৮০)।

আরেক আয়াতে বলা হয়েছে : আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও; যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাট, পার্শ¦দেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। (তাদেরকে তখন বলা হবে,) এটাই সে সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্যে পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন কর। (সূরা তাওবা : ৩৪-৩৫)।

কার্পণ্য নানা স্তরের হতে পারে। কেউ হয়ত নিজের প্রয়োজনে কিংবা ফরয-ওয়াজিব ইবাদতের ক্ষেত্রে সম্পদ ঠিকই ব্যয় করে, কিন্তু অন্যের প্রয়োজনে, দুঃস্থ-অভাবীদের সেবায় দু’পয়সাও তার পকেট থেকে বের হয় না। কেউ হয়ত নিজের প্রয়োজনের খরচটুকুও সহজে করতে পারে না। এর পেছনে কারণ তো একটাই- শয়তান তাকে ভয় দেখায়, সম্পদ ব্যয় করলে একসময় দরিদ্র হয়ে পড়বে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

একই গ্রাম থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত

একই গ্রাম থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত

ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন না : বাইডেন

ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন না : বাইডেন

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান

“ইউক্রেনের কারাবন্দিরা যোগ দিতে পারবেন সেনাবাহিনীতে”

“ইউক্রেনের কারাবন্দিরা যোগ দিতে পারবেন সেনাবাহিনীতে”

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মৃতদেহ উদ্ধার

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মৃতদেহ উদ্ধার

২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মামলার রায় আজ

২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মামলার রায় আজ

জোট গঠনের সম্ভাবনা, কেন ইরানকে গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া?

জোট গঠনের সম্ভাবনা, কেন ইরানকে গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া?

ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে বুড়িমারী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে বুড়িমারী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

ইচ্ছাকৃতভাবে এইচআইভি ছড়ানোর অপরাধে ৩০ বছরের কারাদণ্ড মার্কিন যুবকের

ইচ্ছাকৃতভাবে এইচআইভি ছড়ানোর অপরাধে ৩০ বছরের কারাদণ্ড মার্কিন যুবকের

হায়দরাবাদে রাতভর বৃষ্টিতে শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু

হায়দরাবাদে রাতভর বৃষ্টিতে শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু

বেলগ্রেডে চীন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত

বেলগ্রেডে চীন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত

অবসরের দুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হলেন ফারুকী

অবসরের দুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হলেন ফারুকী

রাফাতে হামলা চালালে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

রাফাতে হামলা চালালে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

প্রথম ফ্লাইটে সউদী গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

প্রথম ফ্লাইটে সউদী গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

প্রধম ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা

প্রধম ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা

সিঙ্গাপুরের সামরিক বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

সিঙ্গাপুরের সামরিক বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

রাফায় ইসরাইলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে : মস্কো

রাফায় ইসরাইলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে : মস্কো

চীনের বিরুদ্ধে এবার আমেরিকার নতুন জোট ‘স্কোয়াড’, কেন বাদ ভারত?

চীনের বিরুদ্ধে এবার আমেরিকার নতুন জোট ‘স্কোয়াড’, কেন বাদ ভারত?

জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদা বাড়ছে

জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদা বাড়ছে